বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছর বাজেট এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট: একটি সমন্বিত পর্যালোচনা (ইন্টারেক্টিভ)

বাজেট ২০২৫-২৬: একটি সামগ্রিক চিত্র

উপস্থাপক

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ (অর্থ উপদেষ্টা)

মোট বাজেট (প্রস্তাবিত)

৭ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা

(পূর্ববর্তী অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে প্রায় ১% কম)

সরকার

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। এই বাজেট হ্রাসকে রাজস্ব একত্রীকরণ এবং আরও কার্যকর আর্থিক পরিকল্পনার কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রথম বাজেট কাট হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রধান লক্ষ্যমাত্রা ও অগ্রাধিকার

মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা

৬.৫% – ৭%

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা

৫.৫%

(বৈশ্বিক পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি)

বাজেট ঘাটতি (জিডিপির)

~৩.৬২% (লক্ষ্যমাত্রা <৪%)

অর্থায়ন: বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র। এটি দশক-সর্বনিম্ন ঘাটতি।

অন্যান্য লক্ষ্য

  • রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি
  • অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা
  • নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
  • আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার
  • বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করা
  • সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী শক্তিশালী করা
  • সামগ্রিক উন্নয়নে জোর, আর্থিক সুসংহতকরণ

বাজেট তুলনা (কোটি টাকা)

সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি কঠিন সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। অন্তর্বর্তী সরকার একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নীতি নির্ধারকদের জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাটাই প্রধান উদ্বেগ।

  • উচ্চ মূল্যস্ফীতি
  • রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা ও শ্লথ গতি
  • ধীরগতির বাজেট বাস্তবায়ন
  • ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ও উচ্চ খেলাপি ঋণ
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস
  • নিম্ন বিনিয়োগ ও সীমিত কর্মসংস্থান
  • বৈদেশিক ঋণ পরিষেবার চাপ
  • সরকারি অর্থের অদক্ষ ব্যবহার
  • রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্স প্রবাহের গতি কম থাকা

মূল্যস্ফীতি: একটি জ্বলন্ত সমস্যা

প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এপ্রিল ২০২৩ ভোক্তা মূল্য সূচক (নতুন ভিত্তি) অনুযায়ী এটি প্রায় ১০% ছিল। এফওয়াই২৫ (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯% এর বেশি ছিল এবং ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ জাতীয় সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩২%।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি (ফেব্রু. ২০২৫)

৯.২৪%

সাধারণত খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি থাকে।

খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি (ফেব্রু. ২০২৫)

৯.৩৮%

গ্রামীণ বনাম শহুরে মূল্যস্ফীতি: উদ্বেগের বিষয় হলো, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি সাধারণত বেশি থাকে এবং এপ্রিল ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে ১৮ মাস ধরে বেশি ছিল। গ্রামীণ জনগণের আয় কম হওয়ায় তারা এই ধাক্কার শিকার বেশি হয়।

মূল কারণ: মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি, যার পেছনে রয়েছে আঞ্চলিক দামের পার্থক্য, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, সিন্ডিকেট এবং মজুতদারী। এটি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের।

সরকারি পদক্ষেপ ও সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার কয়েকবার বৃদ্ধি (আগস্টে ৮.৫% → ৯%, সেপ্টেম্বরে ৯.৫%, অক্টোবরে ১০%) করলেও, সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব নীতির কারণে প্রভাব সীমিত। সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮% এ আনা, তবে এটি পূরণ হওয়া চ্যালেঞ্জিং। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূলত স্বল্প আয়ের মানুষের উপর মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অধীনে কম দামে চাল বিতরণ এবং ঈদ উপলক্ষে এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি চাল প্রদানের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।

দারিদ্র্য ও বৈষম্য

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সীমিত কর্মসংস্থান দেশে দারিদ্র্য ও আয়ের বৈষম্য বাড়াচ্ছে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে, যা রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের কম ব্যয় এবং উচ্চ আউট-অফ-পকেট স্বাস্থ্য ব্যয় মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সিপিডি সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো উচিত যাতে মানুষ স্বাস্থ্য ব্যয়ের কারণে দারিদ্র্যের শিকার না হয়।

প্রধান খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও অগ্রাধিকার

বাজেটে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঋণ পরিশোধ, খাদ্য ভর্তুকি, এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে।

দ্রষ্টব্য: এই চার্টটি প্রধান কয়েকটি খাতের বরাদ্দের একটি সরলীকৃত উপস্থাপনা। মোট অঙ্ক ৭,৯০,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ADP)

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ADP) অর্থবছর ২০২৫-২৬ এর জন্য ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট করা হয়েছে, যা অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর ২ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে উল্লেখযোগ্য সংকোচন।

শীর্ষ এডিবি বরাদ্দ (অর্থবছর ২০২৫-২৬, কোটি টাকা):

  • পরিবহন ও যোগাযোগ: ৫৮,৯৭৩ কোটি টাকা (~২৫.৬% ADP, -১৬% YoY)
  • বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: ৩২,৩৯২ কোটি টাকা (~১৪.১% ADP, -২০% YoY)
  • শিক্ষা: ২৮,৫৫৭ কোটি টাকা (~১২.৪% ADP, -৮.৪% YoY)
  • নগর আবাসন ও উন্নয়ন: ২২,৭৭৬ কোটি টাকা (~৯.৯% ADP)
  • জনস্বাস্থ্য: ১৮,১৪৮ কোটি টাকা (~৭.৯% ADP, জিডিপির <১% রয়েছে)
  • স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন: ১৬,৪৭২ কোটি টাকা (~৭.২% ADP)
  • কৃষি: ১০,৭৯৫ কোটি টাকা (~৪.৭% ADP)
  • পরিবেশ ও পানি সম্পদ: ১০,৬৪১ কোটি টাকা (~৪.৬% ADP)
  • শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা: ৫,০৩৮ কোটি টাকা (~২.২% ADP)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ৩,৮৯৪ কোটি টাকা (~১.৭% ADP)

শিক্ষা খাত

  • মোট বরাদ্দ (প্রস্তাবিত): ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা
  • চলতি অর্থবছরের মূল বরাদ্দের তুলনায় ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি।
  • গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:
    • বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ তৈরি।
    • উচ্চশিক্ষা আধুনিকীকরণ (আউটকাম বেজড এডুকেশন)।
    • এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুবিধা বৃদ্ধি।
    • যুব কর্মসংস্থান।

সামাজিক প্রভাব ও জনকল্যাণ

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (SSNPs)

মোট সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট (প্রস্তাবিত)

১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা

(অথবা প্রায় ৯৫,৯০৮ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ~১২.৫%)

দ্রষ্টব্য: বিভিন্ন সূত্রে বরাদ্দের পরিমাণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

কর্মসূচি সংস্কার ও সুবিধা বৃদ্ধি:

  • কর্মসূচি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা আনা।
  • কিছু কর্মসূচি বাতিল করে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে।
  • মাসিক ভাতা বৃদ্ধি সীমিত (যেমন ৫০ থেকে ১০০ টাকা)।
  • বয়স্ক নাগরিক ও বিধবা ভাতা: ৬৫০ টাকা/মাস
  • প্রতিবন্ধী ভাতা: ৯০০ টাকা/মাস (অতিরিক্ত ৪০০,০০০ নতুন সুবিধাভোগী অন্তর্ভুক্ত)।
  • চা বাগান কর্মীদের সুবিধা তিনগুণ বৃদ্ধি।
  • মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি ১,৮১৯ কোটি টাকায় উন্নীত।
  • জুলাই ২০২৪ অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার (প্রায় ৮৩৪): ২০,০০০ টাকা/মাস
  • সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ১৪০টি থেকে কমিয়ে ১০০টি করা হয়েছে।
  • কম গুরুত্বপ্রাপ্ত: আশ্রয়ণ আবাসন, জয়িতা টাওয়ার।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

  • অপর্যাপ্ত অর্থায়ন
  • দুর্বল লক্ষ্য নির্ধারণ
  • সম্পদের অপচয়
  • বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্বল যোগাযোগ
  • অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়
  • ফলাফল পরিমাপের জন্য মূল্যায়ন কাঠামোর অভাব
  • সুবিধাভোগী নির্বাচনে ত্রুটি
  • জালিয়াতি ও দুর্নীতির উচ্চ সম্ভাবনা
  • প্রকৃত ব্যয়ের তথ্যে স্বচ্ছতার অভাব

রাজস্ব নীতি ও করারোপণ

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি থেকে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা (অথবা ৫.৬৪ ট্রিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ৯%)। এর মধ্যে এনবিআর থেকে ৪.৯৯ ট্রিলিয়ন টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে (আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী)। করের আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় কমানো বা বন্ধ করার আলোচনা চলছে।

রাজস্ব অভিক্ষেপ (অর্থবছর ২০২৫-২৬)

ঘাটতি অর্থায়ন কাঠামো (অর্থবছর ২০২৫-২৬)

আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত পরিবর্তন +

আয়কর:

  • ব্যক্তি আয়ের করমুক্ত সীমা: ৩.৫ লক্ষ টাকা (অপরিবর্তিত, সিপিডি ৪ লক্ষ টাকা করার সুপারিশ করেছিল)।
  • সর্বোচ্চ প্রান্তিক হার: ৩০% (পুনরায় স্থাপিত)।
  • “জুলাই ২০২৪ শহীদদের” পরিবারের জন্য বিশেষ ছাড়ের সীমা: ৫.২৫ লক্ষ টাকা।
  • স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে উৎপাদনশীল খাতে অগ্রিম আয়কর কমানো হচ্ছে।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট):

  • নির্মাণ: ৭.৫% থেকে ১০% এ বৃদ্ধি।
  • ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোর কমিশনে ভ্যাট: ৫% থেকে ১৫% এ বৃদ্ধি।
  • এলএনজি, বায়োডিগ্রেডেবল তৈজসপত্র, শিশুর যত্ন সামগ্রীর জন্য ছাড় প্রসারিত।
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বাধ্যতামূলক ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং টার্নওভার ট্যাক্স থ্রেশহোল্ড পুনর্বিবেচনা করে আগের সীমায় ফিরিয়ে আনার সুপারিশ।

শুল্ক ও আবগারি:

  • শুল্ক উদারীকরণ: ৬২২টিরও বেশি পণ্যে।
  • নতুন শুল্কমুক্ত পণ্য: ১১০টিরও বেশি।
  • আমদানি ভুল ঘোষণার জরিমানা: ৪০০% থেকে ২০০% এ হ্রাস।
  • ব্যাংক আমানত আবগারি শুল্ক ছাড়ের সীমা: ১ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকায় উন্নীত।
  • অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ ভবন, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ফ্লোর স্পেস এবং জমির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তবে সংশ্লিষ্ট করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে (পাঁচগুণ পর্যন্ত) বৃদ্ধি পাবে। লক্ষ্য কালো টাকা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা।

এনবিআর এবং কর ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে (২০১৫ অর্থবছরের ১০.৯% থেকে ২০২৪ অর্থবছরে ৮.২%)। এই প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা এবং এনবিআর-কে ২১শ শতাব্দীর উপযোগী রাজস্ব সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য।

প্রস্তাবিত প্রধান সংস্কারসমূহ +

কার্যক্রমের পৃথকীকরণ:

নীতি প্রণয়ন এবং রাজস্ব সংগ্রহের কাজকে আলাদা করে দুটি পৃথক বিভাগ (রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আইএমএফ ঋণের শর্ত।

ডিজিটালাইজেশন:

কর ব্যবস্থা ১.০ (ম্যানুয়াল) থেকে ৩.০-তে (ডিজিটাল, আন্তঃকার্যক্ষম) উত্তরণ এবং এর জন্য পৃথক ডিজিটালকরণ উইং স্থাপন। বর্তমানে সমন্বিত ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (iVAS) বেঞ্চমার্কের মাত্র ৪৩% সুবিধা প্রদান করে।

কর ভিত্তি সম্প্রসারণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি:

  • এনআইডি ব্যবহার করে ব্যয় তথ্যের সাথে আয় তথ্যের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা।
  • অভিন্ন ভ্যাট হার চালু করার বিবেচনা।
  • অনানুষ্ঠানিক খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংগ্রহের দক্ষতা বৃদ্ধি।
  • মজুদদারি এবং সিন্ডিকেট মোকাবেলা।

শুল্ক যৌক্তিকীকরণ ও রপ্তানি প্রণোদনা:

WTO নিয়ম মেনে শুল্ক কমানো এবং নগদ প্রণোদনা পর্যায়ক্রমে বাতিল করা।

অন্যান্য সংস্কার:

  • WTO বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জাতীয় সক্ষমতা তৈরি।
  • iVAS-এর ত্রুটি সমাধান এবং ভ্যাট সম্পর্কিত কার্যক্রম সমন্বিতকরণ।
  • অ-বন্ডেড ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা সংস্কার।
  • ডিজিটাল অর্থনীতি (ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং) করের আওতায় আনা এবং আইটি-সক্ষম সেবার কর প্রণোদনা পুনর্বিবেচনা।
  • আয়কর আইন ২০২৩ এর বাস্তবায়ন পর্যালোচনা।

পণ্য ও সেবার দামে সম্ভাব্য পরিবর্তন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্যের উপর মিশ্র প্রভাব ফেলবে। মূল লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, যা সাধারণ মানুষের উপর খরচের চাপ বাড়াতে পারে।

দাম কমতে পারে এমন পণ্য ও সেবা

  • ব্যাংক: ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির আবগারি শুল্ক অব্যাহতি।
  • জ্বালানি (এলএনজি): আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি।
  • গৃহস্থালি: হাতে তৈরি মাটির ও অন্যান্য নির্দিষ্ট তৈজসপত্র (পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট, বাটি), টেক্সটাইল গ্রেড পেট চিপস।
  • খাদ্য: প্যাকেটজাত তরল দুধ, পরিশোধিত চিনি (আমদানি শুল্ক হ্রাস)।
  • শিক্ষা: বলপয়েন্ট কলম (স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি)।
  • প্রযুক্তি: ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের (পূর্বে ২২ ইঞ্চি) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি।
  • জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম): অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানিতে শুল্ক-কর হার কমানো।
  • স্বাস্থ্য: ক্যান্সারের ওষুধ ও কাঁচামাল (বিশেষ করে ক্যান্সার, কিডনি, রক্তনালীর রোগের ৭৯টি অতিরিক্ত পণ্য শুল্কমুক্ত)।
  • কৃষি: কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের যন্ত্রপাতি, কৃষি যন্ত্রপাতি (কম্বাইন্ড হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশ)।
  • পরিবহন: বাস (১৬-৪০ আসন, আমদানি শুল্ক ১০%->৫%), মাইক্রোবাস (১০-১৫ আসন, সম্পূরক শুল্ক ২০%->১০%), ই-বাইক, হাইব্রিড/ইলেকট্রিক গাড়ি (শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি), সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স, টায়ার তৈরির উপকরণ।
  • স্যানিটারি ন্যাপকিন: স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি।

দাম বাড়তে পারে এমন পণ্য ও সেবা

  • সামগ্রিক কর ও শুল্ক: আইএমএফের শর্ত মেনে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা।
  • ই-কমার্স: অনলাইন মার্কেটপ্লেসের কমিশনে ভ্যাট বৃদ্ধি (৫% থেকে ১৫%)।
  • মোবাইল ফোন: কিছু ক্ষেত্রে।
  • অন্যান্য: সিগারেট, ফ্রিজ, এসি।
  • পরিবহন (মোটরযান): কিছু ক্ষেত্রে।
  • বিনোদন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মের খরচ।
  • চকলেট: শুল্ক বাড়তে পারে।
  • আমদানি করা হেলিকপ্টার: শুল্ক ১% থেকে ১০% করার প্রস্তাব।

কৌশলগত বিষয়সমূহ

স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণ এবং এর প্রভাব

২০২৬ সালের নভেম্বরে LDC থেকে আসন্ন উত্তরণের প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের কর নীতিগুলোকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর নিয়ম এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য বাধ্যবাধকতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে।

LDC উত্তরণ সম্পর্কিত বিস্তারিত +

শুল্ক ও বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন:

  • শুল্ক, কাস্টমস ডিউটি এবং অন্যান্য চার্জগুলো পর্যালোচনা ও যৌক্তিকীকরণ করা প্রয়োজন।
  • প্রতিশ্রুত হারের চেয়ে বেশি শুল্ক থাকা ট্যারিফ লাইন (যেমন অ্যালকোহল, সিগারেট, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট) চিহ্নিত করে শুল্ক কমাতে হবে। NBR ইতিমধ্যে ৬০টি এমন লাইন চিহ্নিত করেছে।
  • পণ্যের সর্বনিম্ন আমদানি মূল্য তুলে নিতে হবে।
  • আমদানি করা পণ্যের উপর আরোপিত নন-সিডি চার্জ (সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ইত্যাদি) সরাতে হবে যদি সেগুলো বাণিজ্য নিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করে।

রপ্তানি প্রণোদনা:

  • প্রত্যক্ষ রপ্তানি প্রণোদনা (যেমন তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৩-৪% এবং কৃষি রপ্তানির জন্য ২০% নগদ প্রণোদনা) পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে।
  • WTO বিধিমালা লঙ্ঘন করে না এমন অন্যান্য সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কৃষি ভর্তুকি ও WTO বিজ্ঞপ্তি:

LDC উত্তরণের পর কৃষি ভর্তুকি সংক্রান্ত বাণিজ্য ও শুল্ক নীতির পরিবর্তন সম্পর্কে WTO-কে অবহিত করার হার বাড়বে। অভ্যন্তরীণ সমর্থন সংক্রান্ত নোটিফিকেশনগুলো দ্বিবার্ষিক থেকে বার্ষিক ভিত্তিতে জমা দিতে হবে।

WTO বিরোধ নিষ্পত্তি:

  • LDC থেকে উত্তরণকারী দেশগুলোকে উত্তরণের তিন বছর পর পর্যন্ত (২০২৯ পর্যন্ত) WTO বিরোধ নিষ্পত্তি সংস্থার অধীনে নেওয়া হবে না।
  • এই বিধানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সম্ভাব্য বিরোধ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পর্যাপ্ত জাতীয় সক্ষমতা তৈরি এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

TRIPS চুক্তি ও ফার্মাসিউটিক্যালস:

  • LDC হিসেবে বাংলাদেশ যে TRIPS ফার্মাসিউটিক্যাল মওকুফের সুবিধা ভোগ করছে, তা ২০২৬ সাল থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
  • সিপিডি প্রস্তাব করেছে যে ২০২৬ সালের পর ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে ওষুধের উপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া উচিত এবং স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের প্রতিযোগিতা ধরে রাখার জন্য সরকারের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পোস্ট-এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সময়ের জন্য প্রস্তুতিকে বাজেটের জন্য একটি অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা

  • কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধির প্রস্তাব।
  • চাল আমদানির পরিকল্পনা (প্রায় ৭ লাখ টন)।
  • সার উৎপাদন কমেছে এবং আমদানিও কমেছে ডলারের অভাবে, ফলে দাম বেড়েছে।
  • সরকার উৎপাদন বাড়াতে, সার সরবরাহ স্থিতিশীল করতে এবং ভর্তুকি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
  • স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকারমূলক বরাদ্দ।
  • কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা সম্প্রসারণের সুপারিশ (কৃষি পণ্যের বাফার স্টক)।

বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিবেশ

  • বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজমান।
  • পুঁজি পণ্যের আমদানি কমেছে।
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) ঋণ প্রবাহ কমেছে। এসএমই খাত কর্মসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ লোক নিযুক্ত), কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং রাজস্ব কমে যাওয়ায় তারা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
  • এসএমইগুলোর জন্য কম কর ও ভ্যাট থ্রেশহোল্ড একটি অতিরিক্ত বোঝা। উৎসে অগ্রিম আয়কর (AIT) এবং উৎসে কর (TDS) থেকে এসএমইগুলোকে অব্যাহতি দেওয়ার এবং এগুলো চূড়ান্ত কর দায়ের বিপরীতে সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
  • বাজেটকে ব্যবসা-বান্ধব করার এবং বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কর নীতি প্রবর্তনের আশ্বাস।

ব্যাংকিং খাত

  • ব্যাংকিং খাতে মূলধন-ঝুঁকি ভারিত সম্পদ অনুপাত (CRWA) কমেছে, যা ধাক্কা সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।
  • খেলাপি ঋণের উচ্চ পরিমাণ (সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ২,৮৪,৯৭৭ কোটি টাকা) সম্পদের গুণমান এবং তারল্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০২৪ অর্থবছরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দের চেয়েও বেশি।
  • দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়।
  • ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব।

পরিবেশগত রাজস্ব/কর সংস্কার (EFR)

EFR রাজস্ব আহরণ, পরিবেশের উন্নতি (বায়ু/জল দূষণ), এবং জ্বালানি ভর্তুকি সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে। এটি প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন, পরিবেশ সম্পর্কিত সরকারি সেবার মূল্য/ফি, এবং পরিবেশগত কর/চার্জ অন্তর্ভুক্ত করে।

অগ্রাধিকার: জল/স্যানিটেশন/বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল্য নির্ধারণ নীতি, জ্বালানি মূল্য সংস্কার (পেট্রোল/ডিজেলে কার্বন কর), কাঠ কর, শিল্প বায়ু/জল দূষণ চার্জ, অবৈধ শহুরে বর্জ্য নিষ্কাশন চার্জ।

চ্যালেঞ্জ: সচেতনতার অভাব, অপর্যাপ্ত আইনি/প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, উচ্চ প্রশাসনিক ব্যয়, রাজনৈতিক অর্থনীতির সীমাবদ্ধতা, এবং ন্যায্যতার উদ্বেগ। EFR বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার রাজস্ব নীতির অংশ নয়। সংস্কারগুলি বাস্তবসম্মত ও পর্যায়ক্রমে হওয়া উচিত, এবং দরিদ্রদের উপর সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব বিবেচনা করে সামাজিক সুরক্ষার জন্য ব্যয় বৃদ্ধিকে একত্রিত করা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞ মতামত ও রূপরেখা

“আশা প্রকাশ করেছেন যে, আসন্ন বাজেট ব্যবসা-বান্ধব হবে এবং বিনিয়োগ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত করনীতি প্রবর্তন করা হবে।”

– অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

“উচ্চ করের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি বেসরকারি ব্যয় কমিয়ে এবং কর্পোরেট কার্যকলাপ স্তিমিত করে অর্থনৈতিক উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।”

– বিশ্লেষকগণ

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD) এর পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ:

  • ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণীত হচ্ছে কঠিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত নীতিগত পদক্ষেপ।
  • সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত: উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, এবং আর্থিক সংস্থান বাড়ানো।
  • অপরিহার্য নয় এমন ব্যয় হ্রাস; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিতে অগ্রাধিকার।
  • প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা (বাজার নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট মোকাবেলা)।
  • কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা সম্প্রসারণ (কৃষি পণ্যের বাফার স্টক)।
  • প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বৃদ্ধি, পরোক্ষ করের নির্ভরতা কমানো।
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ সীমিত করা।
  • নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য লক্ষ্যযুক্ত ভর্তুকি ডিজাইন।
  • সকল শিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে উচ্চ বেতন বৃদ্ধিতে উৎসাহ।
  • ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর (নারী, যুবক, প্রতিবন্ধী) জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যথেষ্ট ও লক্ষ্যযুক্ত বিনিয়োগ।
  • ব্যক্তি আয়ের করমুক্ত সীমা ৪.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।
  • বাজেট আকার ছোট রাখাকে (৭.৯০ লক্ষ কোটি টাকা) সিপিডি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, যা বাস্তবসম্মত লক্ষ্যের ইঙ্গিত দেয়।

একাডেমিক ও মিডিয়া মূল্যায়ন:

একাডেমিক/অর্থনৈতিক সম্প্রদায়: স্ফীত অর্থনৈতিক ভিত্তিরেখা সম্পর্কে আশঙ্কা (সিপিডি)। কাঠামোগত সংস্কারের দিকে সংযত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাজস্ব বিচক্ষণতার জন্য প্রশংসা।

মিডিয়া মূল্যায়ন: সম্প্রসারণবাদী রাজস্ব উদ্দীপনার চেয়ে পুনর্বণ্টন এবং সংযমকে অগ্রাধিকার। মেগাপ্রকল্প পরিহারকে বাস্তবসম্মত নীতি নির্ধারণের পুনর্নির্মাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া: কল্যাণ কভারেজের বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ, বাস্তবায়ন কার্যকারিতা এবং মুদ্রাস্ফীতির স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ দ্বারা পরিমিত।

উপসংহার

সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীলতা অর্জন করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং LDC উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের ভিত্তি স্থাপন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।

এনবিআর এবং কর ব্যবস্থা সংস্কার এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি কঠিন সময়ে এই সংস্কারগুলোর ভিত্তি স্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে পারে।

বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ, রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যয় যৌক্তিকীকরণ এবং LDC উত্তরণের সাথে সঙ্গতি রেখে বাণিজ্য ও কর নীতিতে পরিবর্তন আনা – এই বাজেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থবছর ২০২৫-২৬ এর জাতীয় বাজেট সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা এবং রাজস্ব সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটি পরিমিত কৃচ্ছ্রসাধনের কাঠামোকে মূর্ত করে। সামাজিক সমতা প্রক্রিয়া, কর ভিত্তি বৈচিত্র্যকরণ এবং ব্যয় যৌক্তিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া একটি কোর্স সংশোধনের প্রচেষ্টা প্রতিফলিত করে। ভবিষ্যতের কার্যকারিতা প্রশাসনিক সক্ষমতা, নীতির ধারাবাহিকতা এবং বিশ্বাসযোগ্য সামষ্টিক শাসনের উপর নির্ভরশীল।

বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের অভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা না গেলে বাজেটের পূর্ণ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে।

Scroll to Top